Monday, May 16, 2011

সামাজিক দায়বদ্ধতা

জাপানি বালক, তোমাকে স্যালুট
স্পেনের রাজা জুয়ান কার্লোস বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিককে সম্মানসূচক অ্যাওয়ার্ডকমান্ডার অব দি অর্ডার অব দ্য সিভিল মেরিট’- ভূষিত করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত স্পেনের রাষ্ট্রদূত উপাচার্যের বাংলোয় এসে এক অনাড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে আরেফিন সিদ্দিকের কাছে অ্যাওয়ার্ডটির পদক এবং সাইটেশন হস্তান্তর করেন এই অ্যাওয়ার্ডটি যতটা গৌরবের ব্যক্তি আরেফিন সিদ্দিকের, ততটা গৌরবান্বিত হয়েছে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষই অধ্যাপক আরেফিনকে এটি প্রদান করা হয়েছেসিভিক ভারচ্যুপ্রমোট করায় তাঁর নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আরেফিন সিদ্দিককে আমাদের আন্তরিক অভিনন্দন



পত্রপত্রিকায় যখন দেখি, কোনো বেতনহীন প্রাথমিক বা মাদ্রাসাশিক্ষকের করুণ জীবনকাহিনি দেখে কোনো ফেরিওয়ালা তাঁকে সাহায্যের জন্য অর্থদানে এগিয়ে আসেন কিংবা লাখ টাকাসহ ব্যাগ ফেলে কোনো রিকশা কিংবা অটোরিকশার আরোহী চলে গেছেন এবং ওই রিকশাওয়ালা বা অটোরিকশার চালক তাঁকে খুঁজে বের করে টাকাসহ তাঁর ব্যাগটি বাড়িতে গিয়ে পৌঁছে দিয়ে এসেছেন অথবা আগুনে পুড়ে মা-বাবা-ভাইবোন এবং সর্বস্ব হারানো এতিম মেয়েদের নিজেকে মা গণ্য করে এবং মায়ের দায়িত্ব নিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁদের ঘর সাজিয়ে দিয়েছেন, তখন স্বভাবতই আমাদের মন থেকে অমলিনতার ছাপ ক্ষণিকের জন্য হলেও বিদূরিত হয় এবং আমরা সিভিক ভারচ্যুর এক বিরল অস্তিত্বের সন্ধান পাই
আমিসিভিক ভারচ্যুকী, এর অস্তিত্ব পরিধি-পরিসর এবং পরিচর্যার জায়গাটি কোথায়, সেসব প্রশ্নের অনুসন্ধান এবং উত্তর পাওয়ার বিষয়টি খুঁজতে চেষ্টা করি গত ২২ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেনের মুখে এক গল্প শুনতে পাই সুখ-বেদনা এবং একজন জাপানি বালককে নিয়ে এই গল্প খানিক সময়ের জন্য আমাকে রীতিমতো হতভম্ব করে দেয়; ওই জাপানি বালকটির প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় মাথা নুইয়ে দেয় পাঠকদের সেই গল্পটি জানানোর জন্যই এই লেখা আনোয়ার হোসেন ঘটনাটি জেনেছেন তাঁদের গ্রুপের একটি ওয়েবসাইট থেকে এটি আমাকে -মেইল করে পাঠান তিনি এই মেইলটি ভিয়েতনামি বংশোদ্ভূত জাপানে এক ইমিগ্রান্ট পুলিশ সদস্য পাঠিয়েছেন তাঁর এক ভিয়েতনামি বন্ধুকে ১৯ এপ্রিল তা ছাপা হয়েছে নিউ আমেরিকা মিডিয়ায় আমি এই -মেইলটি বয়ান করতে চাই
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া জাপানি সুনামির কথা আমরা সবাই অবগত রয়েছি জাপান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এবং সার্বিক ধ্বংসের মধ্য দিয়ে উঠে আসা একালের পৃথিবীর অন্যতম শীর্ষ দেশ অর্থনীতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান, ঐতিহ্য, মানবিকতা, সিভিক ভারচ্যুর চর্চাসবকিছুর জন্য অনুকরণীয় জাতি হিসেবে জাপানের অবস্থান অনেক ওপরে সাম্প্রতিক সুনামি-পরবর্তী সময়ও জাপানের মানুষ এসব গুণ থেকে একবিন্দুও বিচ্যুত হয়নি সময়ে জাপানের সুনামি আঘাতপ্রাপ্ত এলাকায় মানুষকে আমরা অসহায় দেখেছি, কিন্তু বেঁচে থাকার সংগ্রাম মানবিক অবস্থান থেকে সরে আসতে দেখিনি দরিদ্র বাংলাদেশের পদ্মা সেতু নির্মাণে সাহায্যের অঙ্গীকার থেকেও তারা সরে যায়নি যাবে কীভাবে? কারণ, জাপানের মানুষের মূল্যবোধ, সিভিক ভারচ্যুর চর্চা অসীম মনোনিবেশে প্রোথিত রয়েছে তাদের মনের গভীরে; মিশে গেছে জেনারেশনের মধ্যে নির্মিত এক মানবিক আত্মার মর্মমূলে আমরা জানি, সুনামি-পরবর্তী জাপানে ফুকুশিমায় এখন দুর্গত পীড়িত মানুষকে বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য, কাপড়, পানি ইত্যাদি সংগ্রহ করতে হচ্ছে লাইনে দাঁড়িয়ে পারমাণবিক চুল্লি দুর্ঘটনার ২৫ মাইল দূরে একটি স্কুল প্রাঙ্গণে সেদিন একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান দুর্গত ব্যক্তিদের লাইনে দাঁড়িয়ে আয়োজন করেছিল খাদ্য বিতরণ কর্মসূচির সেদিন জাপানের একটি নয় বছরের বালক দাঁড়িয়েছিল এই খাবার সংগ্রহের লাইনে খাবার ছিল সীমিত; কিন্তু লাইন ছিল দীর্ঘ এই বালক একজন স্কুলছাত্র সে দাঁড়িয়েছিল ওই লাইনের একেবারে শেষের দিকে খাদ্য বিতরণের লাইন ঠিক রাখার কাজে নিয়োজিত ভিয়েতনামি বংশোদ্ভূত ওই ইমিগ্রান্ট পুলিশ সদস্য হঠাৎ বালকটিকে দেখতে পান লাইনের শেষভাগে দাঁড়িয়ে বালকটি খাবার পাওয়ার অনিশ্চয়তা জেনেও খাবার বিতরণ পয়েন্টে জড়ো করা খাবারের দিকে তাকিয়ে থাকে গায়ে শীত নিবারণের জন্য পরিধেয় বস্ত্র খুবই কম; একটি মাত্র টি-শার্ট এবং পায়ে দুটি মোজা ক্ষুধা এবং শীত দুটোই তাকে পেয়ে বসেছে হঠাৎ পুলিশ সদস্য বালকটির কাছে গিয়ে তার সম্পর্কে জানতে চাওয়ায় বালকটি জানাল, সুনামির সময় স্কুল ব্যালকনির তৃতীয় তলায় দাঁড়িয়ে সে দেখতে পেয়েছিল তার বাবা তাকে স্কুল থেকে নেওয়ার জন্য গাড়ি চালিয়ে রাস্তা থেকে স্কুলের দিকে ঢুকছেন ছেলেটির বাবা ওই স্কুলের কাছেই একটি কারখানায় কাজ করতেন অকস্মাৎ ছেলেটি প্রত্যক্ষ করল, তাদের গাড়িটি অন্যান্য গাড়ির সঙ্গে পানির টানে সাগরের দিকে ভেসে গেল তারপর তার বাবা আর তাকে নিতে আসেননি... ছেলেটি তার পরিবার সম্পর্কে জানাল যে তারা সমুদ্রপারে বিচ এলাকায় একটি সুন্দর বাড়িতে থাকত মা, বাবা, সে এবং এক বোন সুনামির পর বাড়িটি বিধ্বস্ত হয়ে যায় মা বোনেরও কোনো খোঁজ নেই ঘটনা শুনে পুলিশ সদস্য প্রায় বাক্রুদ্ধ দুরবস্থা জেনে ওই পুলিশ সদস্য তাঁর নিজের গায়ের জ্যাকেটটি খুলে বালকটিকে পরিয়ে দিলেন জ্যাকেটটি পরিয়ে দেওয়ার সময় পুলিশ সদস্যের কাছে থাকা তাঁর নিজের খাবারের প্যাকেটটি একপর্যায়ে বালকটির পায়ের কাছে পড়ে যায় বালকটি তখন খাবারের প্যাকেটটির দিকে তাকিয়ে থাকে অবস্থায় পুলিশ সদস্য প্যাকেটটি হাতে তুলে সেটি বালকটিকে নিতে বলেন বালকটি প্যাকেটটি নিয়ে সোজা হেঁটে একেবারে খাবারের লাইনের শেষ প্রান্তে খাবার বণ্টন পয়েন্টে গিয়ে তা সেখানে রেখে আসে এবং পুনরায় লাইনে নিজ অবস্থানে এসে দাঁড়িয়ে পড়ে পুলিশ সদস্য বালকটির কাছে সে এমনটি করল কেন তা জানতে চাইলেন জবাবে বালকটি জানায়, ‘আমি দেখেছি, এখানে আমার চেয়ে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা অনেক; যদি আমি খাবারের প্যাকেটটি ওখানে রাখি, তাহলে তারা খাবার সমভাবে বণ্টন করে নেবেবালকটির এই অভাবনীয় বক্তব্য শুনে পুলিশ সদস্য কেঁদে ফেলেন তাঁর ভাষায়, ‘ কথা শোনার পর আমি কান্না ঢাকতে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যেতে ঘুরে দাঁড়ালাম
আসুন, আমরা সবাই মিলে জাপানি এই বালককে স্যালুট জানাই তোমাকে কোটি কোটি স্যালুট হে জাপানি বালক! জয় হোক মানবতার, জয় হোকসিভিক ভারচ্যুমুভমেন্টের
(source: daily prothom-alo,ড. শেখ আবদুস সালাম)

1 comment:

  1. Bangladeshi politicians should follow the such type of morality of the japanese innocent boy................

    ReplyDelete